শুক্রবার ● ১ মে ২০২০
প্রথম পাতা » উপকুল » করোনা ভাইরাসের লগডাউনের সুযোগে চাখারে সরকারী খাল দখলের মহোৎসব চলছে
করোনা ভাইরাসের লগডাউনের সুযোগে চাখারে সরকারী খাল দখলের মহোৎসব চলছে
জাকির হোসেন, বানারীপাড়া॥
করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষ যখন গৃহবন্ধি সর্বত্র লগডাউন চলছে প্রশাসন ব্যস্ত অসহায় মানুষদের নিরাপত্ত্বা, খাদ্যসামগ্রী দিতে ঠিক সেই সুযোগে বরিশালের বানারীপাড়ায় চাখার ইউনিয়নের মিরেরহাটে সরকারী খাল দখলের মহোৎসব চলছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে- মিরে হাট বাজার সংলগ্ন সন্ধ্যা নদীর সংযোগ খালে পাইলিং করে দোকান ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্যে গত দু’তিন দিন ধরে মাটি ভরাট করছেন রহিম বেপারী নামের এক ব্যক্তি। এর আগে রহিম বেপারী সহ বেশ কয়েকজন মিলে ওই খালের এক তৃতীয়াংশ দখল করে ২০/২২টি দোকান ঘর ও বসত বিল্ডিং নির্মাণ করে ব্যবসা ও সপরিবারে বসবাস করছেন। এভাবে চলতে থাকলে জনগুরুত্বপূর্ণ ওই খালটি সম্পূর্ণ বেদখল হয়ে যাবে। ফলে সন্ধ্যা নদীর সঙ্গে চাখার বাজার সহ গোটা ইউনিয়নের খাল পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ওই খালটি বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদী থেকে সংযোগ শুরু হয়ে চাখার ইউনিয়নের ওপর থেকে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের পাশ দিয়ে প্রবাহিত সন্ধ্যা নদীর শাখা কালিজিরা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। চাখার ও খলিশাকোটা বাজার এলাকা থেকেও ওই খালটির একাংশ দখল করে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।খালটি দিয়ে নৌ পথে ঐতিহ্যবাহী চাখার বাজারে মাছ,সব্জি,ধান-চাল,ধানের বীজ,বিভিন্ন জাতের গাছের চারা,নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী সহ বিভিন্ন মালামাল আনা নেওয়া হয়ে থাকে।
এছাড়া এলাকার কৃষি জমিতে সেচ কাজে খালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূুমিকা রাখে। ওই খাল দিয়ে বিভিন্ন এলাকার রোগীরা ট্রলার ও নৌকায় চড়ে চাখার ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ও উপজেলার একমাত্র সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে যাওয়া আসা করে থাকে। ইট,সিমেন্ট ও রড সহ ব্যক্তিগত ও সরকারী উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত মালামাল নৌ পথে আনা নেওয়া করতে খালটি ব্যবহার হওয়ায় পরিবহণ খরচ কম লাগে।এদিকে রহিম বেপারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে শুধু সরকারী খালই নয় এর সংলগ্ন এক অসহায় বৃদ্ধা বিধবার ভূমিহীন হিসেবে পাওয়া ৩৬ শতক সম্পত্তিও তিনি দোকান ঘর নির্মাণ করে জবর দখল করে নিয়েছেন। উপজেলার চাখার ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মিরেরহাট বাজার লাগোয়া ২২৭ নং দাগ সম্পত্তি খাস খতিয়ান
ভূক্ত। মিরেরহাট বাজার কমিটির ও ৩নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারেফ গাজী জানান ওই খাস খতিয়ান থেকে মৃত রুস্তুম আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম ভূমিহীন হওয়ায় তাকে ৩৬ শতক সম্পত্তি বন্দোবস্ত দেয় সরকার।
এসব অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে গেলে অভিযুক্ত রহিম বেপারী জানান,তিনি ১৫২২ দাগের সুফিয়া বেগমের কাছ থেকে ওই সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। তবে অভিযোগকারী বিধবা আছিয়া বেগম জানান,রহিম বেপারী যে সম্পত্তি নিজের ক্রয়কৃত বলে দাবী করে দখল করেছেন সেই সম্পত্তি নদীর পশ্চিম পাড়ে সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ২৬ নং মসজিদবাড়ি মৌজায়। আর দখল করছেন ২২৭নং দাগের নদীর পুর্বপারের চাখার ইউনিয়নের মিরেরহাট বাজার সংলগ্ন তার সম্পত্তি।
আছিয়া বেগম আরও জানান,ইতোপূর্বে রহিম বেপারী তার সম্পত্তিতে একটি টিনসেড ঘর নির্মাণ করেছেন। এ বিষয়ে বানারীপাড়া ভূমি অফিসে অভিযোগ করার পরেও কোন ভাবেই রহিম বেপারীকে ওই বিধবার সম্পত্তি দখলকরা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছেনা।
এবিষয়ে মিরের হাট বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারেফ গাজী আরও জানান, ১৯৯৭ সালে শেরেবাংলার পুত্র তৎকালীন পাট প্রতিমন্ত্রী একে ফায়জুল হক মিরেরহাট বাজারের একটি সীমানা নির্ধারণ করেছিলেন। সেই সীমানা ব্যতিরেখে রহিম বেপারী বিধবা আছিয়া বেগমের নামে সরকারী বরাদ্দ দেওয়া খাস সম্পত্তি জবর দখল করেছেন । তিনি আরও অভিযোগ করেন রহিম বেপারী শুধু বিধবার বন্দোবস্ত পাওয়া সম্পত্তিই নয় ওই সম্পত্তি লাগোয়া খালের মধ্যে গাইডওয়াল দিয়ে মাটি ভরাট করে দখল করার চেষ্টা করছেন। এদিকে অভিযুক্ত রহিম বেপারী বিধবার সম্পত্তি দখলের ব্যপারে বক্তব্য দিলেও সরকারী খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ ব্যপারে চাখার ইউপি চেয়ারম্যান ও মিরেরহাট বাজার কমিটির সভাপতি খিজির সরদার অভিযোগ করেন বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও খালটিকে অবৈধ দখল থেকে ভূমিদস্যুদের নিবৃত্ত করতে পারছেন না। তিনি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে জনগরুত্বপূর্ণ খালটিকে রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) অনুপ দাস জানান, সরকারী খাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে স্থানীয় সচেতন মহল জনগুরুত্বপূর্ণ এ খালটিকে রক্ষার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলমের কাছে দাবি জানিয়েছেন।