শিরোনাম:
ঢাকা, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

Dip News24.com
শনিবার ● ৩০ মে ২০২০
প্রথম পাতা » উপকুল » আইলার ১০ বছর ‘আর কত লড়াই করব?’
প্রথম পাতা » উপকুল » আইলার ১০ বছর ‘আর কত লড়াই করব?’
৫৩৭ বার পঠিত
শনিবার ● ৩০ মে ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আইলার ১০ বছর ‘আর কত লড়াই করব?’

রফিকুল ইসলাম মন্টু । ।
---
মাটির রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে মোটর বাইক যাত্রা। পথ পেরিয়ে, মাঠ পেরিয়ে, বিল পেরিয়ে- এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। আঁকাবাঁকা সড়কে ঝুঁকির যাতায়াত। কোথাও এক টুকরো সবুজের দেখা নেই। ধূ ধূ খোলা মাঠ ডুবে আছে পানির নিচে। দূরে ছড়ানো ছিটানো ছোট ছোট বসতি। চাঁদনিমূখা, পারশেমারী, নেবুবুনিয়া ঘুরে কপোতাক্ষের পাড় ধরে বহু পথ পেরিয়ে জালিয়াখালী পৌঁছাতেই চোখে পড়ে রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ বসতি। বাসিন্দারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। মোটরবাইক থামতেই জটলা। নারী-পুরুষ-শিশু সকলে একসঙ্গে ছুটে এলো। অনেকগুলো মানুষ। মলিন মুখ। পোড়া শরীর। বাঁকা মেরুদণ্ড। বসে থাকা কয়েকজন বয়সী মানুষ। চেহারা ঠাহর করা যাচ্ছিল না। সকলেই যেন কিছু বলতে চান!
‘এখন কেমন আছেন?’
‘সেকথা আর বলবেন না। আইলার পর দশটা বছর আমরা ‘মরার’ মতো বেঁচে আছি। দশ বছর আগের অবস্থার সঙ্গে এখনকার অবস্থা মেলাতে পারি না। অনেকেই তো বাড়িঘর হারিয়ে রাস্তার ধারে ঠাঁই করে নিয়েছে। বহু পরিবার তো এলাকা ছেড়েই চলে গেছে। আমাদের সেই স্বজনেরা কোথায় আছে, কেমন আছে, তাও জানি না।’
জাহাঙ্গীর আলমের মুখ থেকে কথাটা একরকম কেড়ে নিয়ে আবুল হোসেন বললেন; কপোতাক্ষের তীরের দিকে তর্জনী তুলে দেখিয়ে দিলেন- ‘ওই তো ভাঙন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। আর কতদিন এখানে থাকতে পারবো জানি না। দশ বছর ধরে জোড়াতালি দিয়েই তো কোনমতে টিকে আছে এ বাঁধ। আমাদের দুর্দিনে কেউ পাশে এলো না। এখন তো আমাদেরও চলে যাওয়ার সময় এসেছে। টিকে থাকার লড়াই আর কতদিন?’

এর নাম গাবুরা। নদী আর সুন্দরবনবেষ্টিত এক দ্বীপ। এখানে অন্যসব জনপদের মত ঋতুচক্রের গতানুগতিক জীবনধারা এখানে আসে না। এখানে দেখা মেলে না ফুল রাঙানো ফাগুনের। নেই সবুজের সমারোহ। মাঠে ফসল নেই, গাছে পাখি নেই। এখানে বারবার আসে ঘূর্ণি, বাতাস, ভাঙন। কপোতাক্ষ-খোলপেটুয়ার বিক্ষুদ্ধতা ভর করে বর্ষায়। গহন গাবুরায় মানুষের ভোগান্তি তখন অনেকখানি বেড়ে যায়। স্বাভাবিক জীবন অচল হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় অইলার প্রলয়ে ভেসে গিয়েছিল যে জনপদ। পশ্চিম উপকূলের সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন এই গাবুরার বাড়িঘর, গাছপালা এমনকি মানুষ পর্যন্ত সেদিন ভেসেছিল স্রোতে। ধনপতির উঁচু ঘর, কর্মজীবীর ডিঙি- কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।

জালিয়াখালী গ্রামে হাঁটি। বাঁধের ঢালে ঘর। জোড়াতালির চালা-বেড়া। নড়বড়ে খুঁটিতে কোনরকমে দাঁড়িয়ে আছে ঘরগুলো। কোথাও ভাঙা বাড়ি, ভগ্ন উঠোন। কোথাও বা বাঁধের অর্ধেকটা জুড়ে ঘর। বাঁধের উপরে যারা জায়গা পায়নি, তাদের ঘর ঢালে। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে চোখ যায় কপোতাক্ষ পেরিয়ে ওপারে কয়রার বেদকাশীর দিকে। ঝাপসা গ্রাম। তবে সেখানকার সবুজ স্পষ্ট। ওপারের সবুজে ঘেরা গ্রামের থেকে এপারের চিত্রটা একেবারেই উল্টো। সরু চিকন বেড়ি বাঁধ উপচে যেকোন সময় পানি ঢুকতে পারে বাড়িঘরে। দেখেই অনুমান করা যায়! এটা কাউকে ব্যাখ্যা করে বলে দিতে হয় না। বর্ষায় এই বেড়ি রক্ষার জন্য গ্রামবাসী কত চেষ্টাই না করেন- বলে শেষ করা যায় না। আলাপে বেড়ির প্রশ্ন উঠতেই কণ্ঠস্বর চড়া হয়ে উঠলো গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলামের-‘দশ বছরে অনেকবার শুনেছি বাঁধ হবে। এই তো টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কাজ শুরু হবে। হয়নি। সরকারের তরফে ছিটেফোঁটা বরাদ্দ এসেছে। জোড়াতালির কাজ হয়েছে। আমরাই আমাদের প্রয়োজনে বাঁশ যোগাড় করে, নিজেরা শ্রম দিয়ে বাঁধ টিকেয়ে রেখেছি। ক’দিন এভাবে রাখতে পারবো, কে জানে?’

মনিরুল ইসলামের কথাগুলো শুনতে শুনতে চোখ যায় নদীর তীরে। বাঁধের কোথাও কোথাও বেশ ভেঙে গেছে। যেন সামান্য জোয়ারের ধাক্কায়ই বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকবে। কপোতাক্ষ কিংবা খোলপেটুয়ার পানি প্রবল বেগে ঢুকে পড়লে আবার ডুববে গাবুরা। মনিরুলের কথায় সায় দিলেন উপস্থিত সকলেই। বললেন, ‘আমাদের জন্য সরকার তো কিছু করলো না। গাবুরা কী বাংলাদেশের বাইরের কোন দ্বীপ? তাহলে এখানে সরকারের নজর নাই কেন? আইলার পর থেকে আমরা এত দুর্ভোগে আছি- সরকার কী দেখে না?’
উদোম গায়ে উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ যুবক, গলায় পুতির মালা। এগিয়ে আসেন নাম লেখানোর জন্য। যুবককে দেখেই মনে মনে ভাবি, এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতিও আছে। আলাপে জানা গেল, জালিয়াখালীর গা ঘেঁসে কপোতাক্ষ পারে এদের বসতি। জালিয়াখালীর এই প্রান্ত বসেই ওই পাড়ার ঘরগুলো স্পষ্ট চোখে পড়ে। সোজা নদী পেরিয়ে নৌকায় যাওয়া যায়। তবে রাস্তা ঘুরে গেলে অনেক দূরের পথ। এই গ্রামের মানুষের জীবনজীবিকার পথও অনেকটা রুদ্ধ। কেউ মাছ ধরে, কেউ মাটি কাটে, ছোটখাটো ব্যবসা করে, আবার অনেকে মোটরবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকে আবার জীবিকার কোন পথ না পেয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসা শ্যামবর্ণ যুবকের কাছে জানতে চাই- কী নাম?
শ্যামল।
কী করেন?
মাছ ধরি।
আয়-রোজগার কেমন?
কী করে বাঁচমু বাবু? আমাদের তো কিছু নাই। আইলা আমাগো সব লইয়া গেছে। দশ বছর কাটাইলাম কোন মতে। এখন যে আর পারছিনে। পরিবার পরিজন নিয়ে চলাই দায় হয়ে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় আইলা দ্বীপ ইউনিয়ন ‘গাবুরা’ নামটি পরিচিত করে তুলেছে দেশে বিদেশে। এ দ্বীপের মানুষগুলো বছরের সারা মৌসুমই সংকটে থাকেন। জীবন জীবিকায় প্রতিবন্ধকার শেষ নেই। সুন্দরবনকেন্দ্রিক জীবিকা এখানকার মানুষের। আইলার প্রলয়ে আসা নোনাপানি এখানকার সবুজ গিলে খেয়েছে। এখানকার যে মানুষগুলো কৃষি আবাদে জীবিকা নির্বাহ করতেন, তাদের রোজগার এখন অন্য উপায়ে। অনেকে এলাকা ছেড়ে পা বাড়িয়েছে শহরের দিকে। আইলা এ দ্বীপকে এতটাই ভঙ্গুর করে দিয়ে গেছে, এখানে এখন আর ফণী’র মতো বড় ঘূর্ণিঝড়ের প্রয়োজন নেই। অমাবশ্যার জোয়ারে পানির চাপ একটু বাড়লে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আমি বহুবার এই দ্বীপে গিয়েছি, তছনছ হওয়া মানুষের জীবন দেখেছি। অসংখ্য প্রতিবেদন লিখেছি। হাড় ঝিরঝিরে মানুষের পোড়া শরীর, শুকনো মুখ, পেট বড় হওয়া শিশুদের ছবি আমি পাঠককে দেখিয়েছি। ঘাসহীন মাটির রাস্তায় হাটলে চোখে পড়ে সবুজহীন জনপদের বিবর্ণ চেহারা। মাটির রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগের অন্ত নেই। বর্ষায় অনেক সড়কে চলাচল বন্ধ। শিক্ষা-স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের সরকারি সেবা বিপর্যস্ত। ইউনিয়ন পরিষদের হিসাবে, এখানে ৩৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের গাবুরা ইউনিয়নে গ্রাম আছে ১৫টি। ৮ হাজার ৩২১টি পরিবারে লোকসংখ্যা ৪৩ হাজার ২৬২জন। এমন একটি স্থানে শহুরে মানুষের পদার্পণ মানে এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ।
ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত পেলে আমি কথা বলি উপকূলের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে। তালিকায় গাবুরা থাকে প্রথম দিকে। সর্বশেষ শক্তিধর ঘূর্ণিঝড় ফণী আভাসের পর এলাকার অগ্রসর তরুণ খান আবু হাসান আমাকে জানালো, ফণী আঘাত করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দ্বীপ গাবুরা। তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। দ্বীপের ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১৩ কিলোমিটারই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। হালকা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ায় নদীর হালকা তুফান ও ঢেউয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে যেতে পারে। আবু হাসান আতঙ্কের সুরে বলতে থাকে, ‘গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী, পার্শ্বেমারী, নেবুবুনিয়া, জেলেয়াখালী, গাবুরা, চকবারা, ডুমুরিয়া, হরিসখালী, ৯নং সোরা এবং পূর্ব চাঁদনীমুখার কিছু অংশের মানুষ ঝুঁকিতে।এই কয়েকটি এলাকা ঝুঁকিতে থাকার অর্থ হচ্ছে- গোটা গাবুরাবাসীরই জানমাল নিরাপত্তহীন। নদীতে ঢেউ কিংবা বাতাসের জোর বাড়তে থাকলে গাবুরার মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ে।’
গাবুরাবাসীর কাছে এইসব সংকটের কথা আমি বহুবার শুনেছি। অনেক স্থান আমার পায়ে হেঁটে দেখা। আইলার পর বিভিন্ন সময়ে এখানে বেড়িবাঁধের কাজ হলেও টেকসই হয়নি। তাই গাবুরার মানুষকে নিরাপদ করা যায়নি। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স-এর একটি প্রতিবেদন আমার হাতে আসে কিছুদিন আগে। এতে ইউনিয়নের ওয়ার্ডভিত্তিক ঝুঁকি নিরূপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো স্পষ্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয় নদীর ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও লবণাক্ততাকে। এ ওয়ার্ডের একপাশে খোলপেটুয়া, অন্যপাশে কপোতাক্ষ নদী। প্রতি বছর এ এলাকার নদীর ভাঙন মানুষের একমাত্র অবলম্বন কৃষিকাজ থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে।মানুষজন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে লবণ পানির কারণে এলাকায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ১নং ওয়ার্ডের লতিফ খানের বাড়ি থেকে চৌদ্দরশি ব্রীজ পর্যন্ত বেড়িবাঁধে ঝুঁকি রয়েছে। একই সমস্যা রয়েছে ২নং ওয়ার্ডেও। এ ওয়ার্ডে আফছারগাজির বাড়ির সামনের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ৩নং ওয়ার্ডের নেবুবুনিয়া থেকে গাবুরা তহসিল অফিস পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরও রয়েছে নানামূখী সমস্যা। এ ওয়ার্ডের নেবুবুনিয়া থেকে গাগড়ামারী নদী পর্যন্ত বেড়িবাঁধে ভাঙন।৫নং ওয়ার্ডের গাগড়ামারী, পার্শ্বেমারী ও নাপিতখালী এলাকায় বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ৬নং ওয়ার্ডের রহিম মেম্বারের বাড়ি থেকে চাঁদনীমুখা পর্যন্ত নদীভাঙন রয়েছে। ৭নং ওয়ার্ডের ডুমুরিয়া খেয়াঘাট থেকে হরিসখালী পর্যন্ত নদীর ভাঙন রয়েছে। এছাড়াও ৮নং ওয়ার্ডের চরবারা পাঞ্জেগানা মসজিদের পাশে এবং ৯নং ওয়ার্ডে অধিকাংশ স্থানেই দুর্বল বেড়িবাঁধ। সমস্যার তালিকা ফুরোয় না।
উপরের খণ্ড চিত্র থেকে স্পষ্টই ফুটে ওঠে গাবুরার প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডেই কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। ভাঙনের সমস্যা প্রকট। কোথাও কোথাও ব্লক ফেলা হলেও তা ইতিমধ্যে ভাঙনে নদীতে হারিয়েছে। চাঁদনিমূখা থেকে পার্শ্বেমারীর দিকে বেড়িবাঁধ ধরে হাঁটলে চোখে পড়ে গাবুরার বিপন্ন রূপ। আবার ডুমুরিয়া খেয়াঘাট থেকে বেড়িবাঁধ ধরে চাঁদনিমুখার দিকে যেতেও বিপন্নতার চিত্র ভেসে ওঠে। বসতি বানানোর শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে ফেলার পর অনেক মানুষ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকের আবার একাধিক বার ঘর বদল করতে হয়। এর মাঝেই মানুষের জীবিকা। রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া। আবার পরের দিনের রোজগারে বের হওয়া। লোকালয়ে মানুষের কোলাহল, মসজিদে আজানের ধ্বনি, ঘরের পাশে গরুর হাম্বা রব, খোলপেটুয়া নদীতে ডিঙি বাওয়ার শব্দ কিংবা প্রবল বাতাসে কেওড়া গাছের মগডাল থেকে ভেসে আসা শোঁ শোঁ আওয়াজ- সবই আছে গাবুরায়। শুধু নেই সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাটুকু। ডুমুরিয়া খেয়াঘাটের ছাউনির নিচে দিনভর যাত্রীর অপেক্ষায় থাকেন পঞ্চশোর্ধ্ব মোহর আলী। ঘাটে টিকেট কাটেন তিনি। এক সময় বনে কাজ করতেন। কয়েক বছর হলো ঘাট ইজারার অংশীদার। মোহর আলী কিংবা আরও অনেকের হয়তো রোজগারের কিছুটা ব্যবস্থা হয়েছে; কিন্তু এমন আরও অনেকে রোজগারের তাগিদে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সকালে-বিকালে কিংবা ভর দুপুরে নারী-শিশুরা চিংড়ির পোনা ধরতে নামে। কেউবা নামে মাছ ধরতে, কাঁকড়া ধরতে কেউ যায় সুন্দরবনে।ডরভয়হীন কিছু উদোম কিশোরদল নদীর ধারের উঁচু গাছের মগডাল থেকে লাফিয়ে পড়ে নদীতে।এর মাঝেও বাতাসে নদীর ঢেউ বাড়লে, জোয়ারের চাপ বাড়লে, গাছের ডাল হেলে পড়লে, গাবুরার মানুষের মনে বাড়ে আতঙ্ক। ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যাল পেলে ভয় বাড়ে। যেমনটা হয়েছিল ক’দিন আগে ঘূর্ণিঝড় ফণী’র সিগন্যালে। সরকারের তরফে ঘোষণা অনুযায়ী ফণীর নিশানা ছিল পশ্চিম উপকূলের সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট অঞ্চল। আঘাত এলে গাবুরা আবার ডুবতো। মানুষগুলো আবার ছুটতো এদিক-ওদিক। কিন্তু ফণী সরে যাওয়ায় এই যাত্রা বেঁচে গেছে গাবুরা। ফণী বড় ধাক্কা দিতে না পারলেও ঘূর্ণিঝড় সিগন্যাল শেষে হলে গাবুরায় এসেছিলেন সরকারের দুই মন্ত্রী। মাত্র কুড়ি দিন আগে ৫ মে, ২০১৯ দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম গাবুরার খোঁজখবর নিয়েছেন। তারা নাজুক বেড়িবাঁধের অবস্থা সরেজমিনে দেখেছেন। আর শেষে আশ্বাস দিয়েছেন, সরকার গাবুরার মানুষকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিবে। গাবুরার বাসিন্দাদের একজন বলছিলেন, ‘কী সৌভাগ্য দ্বীপের মানুষের! ফণীর ঝাপটা লেগেছিল বলে গাবুরায় পা পড়ল মন্ত্রীদের। এবার বুঝি কপাল খুলবে!’

ফণীর কারণেই হোক, আর যে কারণেই হোক, আইলা প্রলয়ের দশ বছর পরে মন্ত্রীদ্বয়ের আগমনে আশান্বিত গাবুরা। মন্ত্রীর আশ্বাসে এখানকার শ্রমজীবী মানুষের মনে ফিরেছে স্বস্তি। মন্ত্রী যেমনটা বলেছেন, চারিদিকে উঁচু বেড়িবাঁধ আর ৪০টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হবে। মন্ত্রীর আশ্বাসের এই কল্পিত দৃশ্যের সঙ্গে আমি বাস্তবের ছবি মিলিয়ে দেখি- নিঃন্দেহে বদলে যাবে গাবুরা। বিধ্বস্ত-বিপন্ন চেহারা ঢাকা পড়বে উঁচু নিরাপত্তা বেষ্টনির আড়ালে। লবণের আগ্রাসন থেকে মুক্তি পাবে এখানকার মানুষ। হবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা। থাকবে না জ্বালানি সংকট। মানুষ ফিরবে চাষাবাদে। আয় রোজগারের সুযোগ বাড়বে। এসবই আসলে বেড়িবাঁধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ডুমুরিয়া খেয়াঘাট ইজারাদার মোহর আলী, যাত্রীবাহী মোটরবাইক চালক নুরুজ্জামান, চরবারার শ্রমজীবী আইয়ূব আলীসহ আরও অনেকে আশান্বিত। নতুন স্বপ্ন দেখছেন তারা।
ডুমুরিয়া ঘাট থেকে ইঞ্জিননৌকা ছুটে চলে নীলডুমুরের দিকে। চৌদ্দরশি ঘাট থেকে লঞ্চের হুউসল ঝাপসা হয়ে কর্ণকুহরে ধাক্কা দেয়। অস্তরাগে সূর্যের আলো ম্লান হয়ে আসে। ঘাটে ভিরে কর্মজীবীদের ডিঙি। বনের ঝরা পাতাগুলো স্রোতের টানে চলে যায় দূরে, বহুদূরে। গহন গাবুরার মানুষের নতুন স্বপ্ন আর সংকটের সমীকরণ মিলে না। সন্দেহ-শংকা কাটে না। ‘আর কত লড়াই করব?’- প্রশ্নটা রেখেই ঘাটের কংক্রিট ব্লকে ধাক্কা খায় ইঞ্জিননৌকা।

সুত্র ঃ রাইজিং  বিডি





উপকুল এর আরও খবর

চরফ্যাশন মুজিবনগর ইউনিয়নে মহান বিজয় দিবস উদযাপন চরফ্যাশন মুজিবনগর ইউনিয়নে মহান বিজয় দিবস উদযাপন
চরফ্যাশন কারামাতিয়া কামিল মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণী চরফ্যাশন কারামাতিয়া কামিল মাদ্রাসার বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ও পুরস্কার বিতরণী
চরফ্যাশনে বেগম রোকেয়া দিবসে জয়িতাদের সংবর্ধনা চরফ্যাশনে বেগম রোকেয়া দিবসে জয়িতাদের সংবর্ধনা
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের গাছের চারা বিতরণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের গাছের চারা বিতরণ
চরফ্যাশনে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত চরফ্যাশনে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
তজুমদ্দিনে উপজেলা বিএনপির দাবী “দলের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে” তজুমদ্দিনে উপজেলা বিএনপির দাবী “দলের সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে”
চরফ্যাশনে হামলা-ভাঙচুর মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ধরছে না পুলিশ চরফ্যাশনে হামলা-ভাঙচুর মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ধরছে না পুলিশ
চরফ্যাশন বাজার চাল আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির কমিটি গঠন চরফ্যাশন বাজার চাল আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমিতির কমিটি গঠন
চরফ্যাশনে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ চরফ্যাশনে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
তজুমদ্দিনে আড়ালিয়া মাদ্রাসায় বিশৃংখলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন। তজুমদ্দিনে আড়ালিয়া মাদ্রাসায় বিশৃংখলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন।

আর্কাইভ