বুধবার ● ৮ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » উপকুল » নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলে পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে গবেষণাটিতে। ৫১.৮% পরিবারে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাা ঘটেছে এবং ৭২.৬% সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলে পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে গবেষণাটিতে। ৫১.৮% পরিবারে পারিবারিক সহিংসতার ঘটনাা ঘটেছে এবং ৭২.৬% সংসারে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
দ্বীপ নিউজ ডেস্ক
অর্ধেক জেলে খাদ্য সংকটে, চড়া সুদে ঋণ করেছেন ৪৫.৭%: বিকল্প কর্মসংস্থানের সুপারিশ । বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন ৭০% জেলে: কোস্টের গবেষণা
বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণে চলমান ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭০% জেলে, আয় না থাকায় এবং সরকারি সহযোগিতা প্রাপ্তদের তালিকায় নাম না থাকায় উপকূলের প্রায় অর্ধেক জেলে পরিবার তিনবেলা ঠিকমতো খাবার সংগ্রহ করতে পারছেন না। বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্টের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, ভোলা,পটুয়াখালী, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার মোট ২৮৪টি জেলে পরিবার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কোস্ট ট্রাস্ট।
গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাভাবিক অবস্থায় সবচেয়ে বেশি, ৪২.৪% জেলে পরিবারেরই মাসিক গড় আয় ৬-১০ হাজার টাকা থাকলেও নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে একেবারেই কোন আয় নেই ৬০.৮% পরিবারের। এর ফলে আগে যেখানে তিনবেলা খেতেন ৯৫.৮%, সেখানে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে তিনবেলা খেতে পারছেন ৫১% পরিবার।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলে পরিবারগুলো সহযোগিতা করতে সরকার ৪৩ কেজি করে চাল দিচ্ছে। কিন্তু ৬৫.৮% জেলে পরিবার চাল পেলেও সরকারি এই সহায়তা এখনো পাননি ৩৪.২% পরিবার। যারা পেয়েছেন তাদের অর্ধেক আবার সেটা পেয়েছেন নিষেধাজ্ঞা শুরুর প্রায় এক মাস পরে। অন্যদিকে ৪০% জেলের অভিযোগ, সব শর্ত পূরণ করলেও তাদের নাম এই সরকারি সাহায্য প্রাপ্তদের তালিকায় উঠেনি, ফলে তাঁরা কিছুই পাননি।
সরকারি সহায়তা হিসেবে চাল প্রাপ্তদের ৬৭.৫% বলেছেন যে, এই চাল তাঁদের সংসার চালানোর জন্য যথেষ্ট নয়, কারণ সংসারের অন্যান্য খরচের জন্য নগদ কোন সহায়তা নেই এবং ৯৬.১% জেলেই এ সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় আর কোন ধরণের সহায়তা পাননি। এর ফলে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সুদের উপর ধার করেছেন ৭৯.৯% জেলে, আগাম শ্রম বিক্রি করেছেন ৪২.১%, মহাজনের কাছে চড়া সুদে ঋণ করেছেন ৪৫.৭%।
জানা গেছে সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ছাড়া ৯৫.৪% জেলেরই বিকল্প কোনও আয়ের উৎস্য নেই। তাই গবেষণা প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে জেলেদের জন্য বিকল্প আয় নিশ্চিত করার সুপারিশ তুলে ধরা হয়। দেশের মৎস্য সম্পদ বাড়াতে মৎস্য আহরণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতার স্বীকৃতি দিয়ে গবেষণা প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞা চলকালীন সময়ে জেলে পরিবারের বিভিন্ন সংকট মোকাবেলায় কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো: চালের বদলে নগদ সহায়তা, সহজ ঋণ বা আর্থিক সাহায্য, জেলেদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন, বাল্যবিয়ে রোধ ও শিক্ষার হার বাড়াতে সচেতনতা ও প্রণোদনমূলক কার্যক্রম, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সমন্বয় করে “মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ সময়” নির্ধারণ।
কোস্ট ট্রাস্টের গবেষক ইকবাল উদ্দিন বলেন, মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধিকরণের ফলে জেলেদের আর্থ-সামাজিক জীবনে এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা, নারী জেলের ঝুঁকি ও জেন্ডার ন্যায্যতা বিশ্লেষণ করা এবং জেলেদের চাহিদাগুলো পূরণের ক্ষেত্রে সুপারিশ তুলে ধরার উদ্দেশ্যেই কোস্ট ট্রাস্ট এই গবেষণাটি পরিচালনা করে।
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বার্ষিক জিডিপিতে মৎস্যখাতের অবদান ৩.৫৭ শতাংশ। শুধু মাত্র ইলিশ একক মাছ হিসেবে দেশের মৎস্য চাহিদার ১২ ভাগ চাহিদা পূরণ করে। গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে ৫৮.৩৫ শতাংশ। সারা দেশের মানুষের মৎস্য চাহিদা পূরণ করলেও জেলেরা বরাবরই বঞ্চিত। মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন সময়গুলোতে তাদের বেশির ভাগই মানবেতর জীবন যাপন করে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে শুধু চাল সাহায্য যথেষ্ট নয় কারণ সংসারের অন্যান্য খরচের জন্য নগদ সহায়তা প্রয়োজন।