শুক্রবার ● ১৫ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » রমজানে একশো টাকার তরমুজ ৪০০ টাকায় কিনছে ক্রেতারা
রমজানে একশো টাকার তরমুজ ৪০০ টাকায় কিনছে ক্রেতারা
এম, নুরুন্নবী
তজুমদ্দিনে তরমুজের বাম্পার ফলনেও চড়া দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তরমুজ চাষীরা গড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি করলেও বাজারে তা ক্রেতাদের হাতে পৌছে নুন্যতম ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে। এ নিয়ে ক্রেতাদের পাশাপাশি কৃষকরাও হতাশ।
শিবপুর, দক্ষিণ সম্ভুপুর ও শশীগন্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি বড় আকারের তরমুজের দাম হাকা হচ্ছে ৩ থেকে ৫ শত টাকা! মাঝারী ও ছোট তরমুজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে নুন্যতম ১০০ থেকে ২৫০ টাকায়। কৃষকের কাছ থেকে ১০০ টাকায় কেনা তরমুজ ভোক্তার হাতে পৌছে প্রতি পিস প্রায় ৪০০ টাকায়! রমযান মাসের কারনে এমন দাম নিচ্ছেন বলেও অভিমত অনেক ক্রেতা সাধারনের। এদিকে বেপারীরা দাবী করেন, এবার ফলন কম হওয়ায় ও পরিবহন শ্রমিক, খরচের কারনে দাম বেশি নিচ্ছেন তারা। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক চাষী পাইকারের কাছে বিক্রি না করে নিজেরাই বাজারে এনে খুচরা বিক্রি করছেন।
উপজেলার চাঁদপুর ইউপির শায়েস্তাকান্দি গ্রামের তরমুজ চাষী মহিউদ্দিনের সাথে কথা হয় ১৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১ টায়। তিনি জানান, “আড়াই একর জমিতে তরমুজের চাষ করি। এক একর ফসল সংক্রমণের কারনে নষ্ট হয়ে যায়। বাকী দেড় একর জমিতে তরমুজের ভালো ফলন পাওয়ার ক্ষতি পুষিয়েও লাভের মুখ দেখবেন। এবছর তিনি তরমুজ চাষে আড়াই একরে প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা খরচ করে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। উপজেলার এ সফল তরমুজ চাষী জানান, জমি থেকে তিনি ছোট বড় মিলিয়ে প্রতিটি তরমুজ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। শম্ভুপুর বাজারের মুজাম্মল বেপারী ক্ষেতে এসে তরমুজ নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ওই ব্যাপারীর কাছে দেড় একর জমির ২২০ থেকে ২৫০ পিস তরমুজ ২ লক্ষ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি”।
শুক্রবার শম্ভুপুর বাজারের ক্রেতা সিরাজ জানান, “ইফতারীর জন্য ৪০০ টাকায় তরমুজ কিনেছেন মুজাম্মল বেপারীর কাছ থেকে। গত বছরের থেকে এ বছর দাম অনেক বেশি। বাজারে খুচরা বিক্রেতা চাষীদের কাছ থেকে তরমুজ কিনলে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়।”
কাজিকান্দি গ্রামের চাষী আইয়ুব জানান, “দুই একর জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। বিভিন্ন কারনে ফলন ভালো না হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নিজেরাই বিভিন্ন বাজারে এনে খুচরা বিক্রি করছি।”
একই গ্রামের চাষী ও খুচরা বিক্রেতা আব্দুল মতিন জানান, “পাঁচ একরে তরমুজ চাষে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। চৈত্র মাসে কুয়াশা ও খালে লবনাক্ত পানির কারনে ফলন ভালো হয়নি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৭০-৭৫ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। সেজন্য দাম বেশি না পেলে লসের মধ্যে পড়তে হবে।”
শশীগন্জ বাজারের ক্রেতা রফিক জানান, “অনেক কৃষক কাল বৈশাখীর ভয়ে সময়ের আগেই তরমুজ তুলে নিচ্ছেন ক্ষেত থেকে। যারা শেষ সময়ে তরমুজ বপন করেছেন তারা বৃষ্টিতে ক্ষতির আশঙ্কায় পরিপুষ্ট হওয়ার আগেই ফসল তুলে ফেলছেন। তারপরও দাম কমছেনা।”
শশীগঞ্জ বাজারে খুচরা বিক্রেতা মোঃ নুরনবী জানান, তিনি বহু বছর ধরে বিভিন্ন হাটে তরমুজ বিক্রি করে আসছেন। শ্রমিক, পরিবহন খরচ ও পচনের কারনে কৃষক পর্যায় হতে ক্রেতা পর্যায়ে আসতে দামের ব্যাবধান অনেক বাড়ছে বলে তার মত।