বৃহস্পতিবার ● ৬ জানুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থনীতি » দুর্গম দ্বীপের আঁধারে জ্বলে উঠলো আলো
দুর্গম দ্বীপের আঁধারে জ্বলে উঠলো আলো
এম, নুরুন্নবী, দূর্গম দ্বীপ থেকে ফিরে।।
মেঘনা নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলে সন্ধ্যার আঁধার নামতো এক ভয়াবহ ভূতুরে পরিবেশ নিয়ে। রাত যখন গভীর হয় বিমুর্ত অন্ধকারে শিয়ালের ডাকেও প্রাণহীন নিস্তজ দ্বীপবাসী। বাতিতে কেরসিন তেল খরচ করে বই খাতার দেখা মেলেনা এই চরের হাজারো শিশুর ভাগ্যে। অতি জরুরী কাজে ঘুটঘুটে আঁধারে হেরিকেন বা কুপি বাতিই এসব মানুষের দ্বীপশিখা হয়ে আছে বছরের পর বছর। ঠিক এমনই পরিবেশ বিরাজ করছে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার বিদ্যুৎ বিহীন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর মোজাম্মেল, চর শাওন ও চর জহির উদ্দিনে। অন্ধকার এসব দ্বীপগুলো এখন আলোয় আলোকিত। নিমিষেই কেটে গেলো রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকার। সন্ধ্যার পর দূর নদী থেকে দেখলে মনে হয় যেন একটুকরো সোনা ! এই তিন দ্বীপের সাড়ে ৮ হাজারের অধীক ঘরে একযোগে জ্বলছে বিদ্যুতের বাতি। মেঘনা উপকুলের তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ও সোনাপুর ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন এই দূর্গম অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার মানুষের স্বপ্ন এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে । সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে তজুমদ্দিন উপজেলার বিদ্যুৎ বিহীন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর মোজাম্মেল, চর শাওন ও চর জহির উদ্দিনের ৮ হাজার ৬০০ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছে। ৩২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই বিদ্যুৎ লাইন নির্মানে ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে ৯২ কোটি টাকা।
বুধবার দুপুর তিনটায় ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন চরমোজাম্মেল শাওন বাজারে শতশত মানুষের উপস্থিতিতে এই বিদ্যুতায়নের উদ্ভোধন করেন। এসমসয় ভোলা জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম আলতাফ হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ কিরন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক দেওয়ান প্রমুখ।
বহু বছরের কাঙ্খিত বিদ্যুৎ পেয়ে খুশি চরাঞ্চলের সাধারন মানুষ। বিদ্যুতের আলোয় নিজেদের সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখছেন তারা। উপজেলার দুই’টি ইউনিয়ন চাঁদপুর ও সোনাপুরের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই তিনটি চরে বসবাস করছে অন্তত ১০ হাজার পরিবার। এই এলাকাকে মেঘনা নদী পৃথক করে দেয়ায় উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা ছিলেন বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে উন্নত সুযোগ সুবিধা দিতে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ-কে কাজে লাগিয়ে কৃষি ও শিক্ষাজীবন সমৃদ্ধ করে উন্নত ও আধুনিক জীবন গড়ার প্রত্যাশা চরবাসী ও তাদের সন্তানদের।
ভোলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম আলতাফ হোসেন জানান, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে চরাঞ্চলের এসব বাসিন্দার কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সরকার এই প্রকল্পের আওতায় সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ৮ হাজার ৬০০ পরিবারের মাঝে বিদুৎ পৌঁছে দিচ্ছে। ৩২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিদ্যুৎ লাইন নির্মানে ব্যয় করা হয়েছে সাড়ে ৯২ কোটি টাকা। খুব শীঘ্রই বাকী পরিবারগুলোও বিদ্যুতের আওতায় আসবে।