রবিবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » ছবিঘর » রাজধানীর কমলাপুরে ভালো কাজের হোটেল
রাজধানীর কমলাপুরে ভালো কাজের হোটেল
রিপন শান :
সৃষ্টির সেরা মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয় ভালো কাজে । একটি ভালো কাজ একজন মানুষকে অমরত্বও দান করতে পারে । দুনিয়া ও আখেরাতে ভালো কাজের পুরস্কার দেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ।
একবেলা ফ্রীতে পেটপুরে খাইয়ে ভালো কাজের পুরস্কার দেয়া হচ্ছে ঢাকার কমলাপুরে ।
এখানে এমন একটি হোটেল আছে, যেখানে খেতে কোন টাকা লাগে না। সারাদিনে একটি ভাল কাজ করার কথা বলে সেই হোটেলে একবেলা পেটপুরে খেতে পারেন অসহায় মানুষেরা। ইদানিং যারা কমলাপুর গেছেন তাদের নিশ্চয় ফ্রি খাওয়ার এই হোটেলটি চোখে পড়ে থাকবে।
হোটেলটির নাম ‘ভালো কাজের হোটেল’। এখানে প্রত্যেক শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিন দুপুর দেড়টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অসহায়দের মাঝে ফ্রি খাবার দেওয়া হয়। শুক্রবার খাবার দেওয়া হয় রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অনাহারী মানুষ এবং এতিমদের মাঝে। এই হোটেলের কার্যক্রম বেশ চমকপ্রদ। প্রত্যেকদিন সময় মতো ক্ষুধার্তরা ভালো কাজের হোটেলের সামনে জড়ো হয়ে লাইনে বসে পড়েন। এরপর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয় সারা দিনে তারা কে কি ভালো কাজ করেছেন? কেউ হয়তো বলেন তিনি একজন অন্ধকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিয়েছেন বা কোন শিশুকে তার মাকে খুঁজতে সাহায্য করেছেন বা কোন রিক্সাওয়ালা হয়তো বলেন তিনি কোন অসহায় যাত্রীকে বিনা ভাড়ায় তার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন কিংবা কেউ হয়তো বলেন তিনি কোন অসুস্থ প্রতিবেশীকে আজ সেবা করেছেন। এসবই হচ্ছে ভালো কাজ। তবে যারা বলেন কোন ভালো কাজ করেননি, তাদের বলা হয় অন্যদের খাবার ও পানি সরবরাহে সাহায্য করতে। অন্যদের খাওয়া শেষ হলে তারাও খেতে পারেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ ক্ষুধার্তকে এভাবে ভালো কাজের কথা বলার বিনিময়ে ফ্রি খাবার দেওয়া হয়।
কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী তরুণের উদ্যোগে এই ব্যতিক্রমী হোটেলটি চালু হয়েছে সপ্তাহ তিনেক
আগে। তবে উদ্যোগের শুরুটা গত ডিসেম্বরে, ‘ভালো কাজের বিনিময়ে আহার’ নামে যার শুরু হয়েছিল। সে উদ্যোগের মাধ্যমে সপ্তাহের কোনো একদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে খাওয়াতেন তরুণ এই স্বেচ্ছাকর্মীরা, করোনাকালে কর্মহীন মানুষদের কষ্ট দেখে যা হয়ে ওঠে নিয়মিত। সেই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় ভালো কাজের হোটেল।
এই স্বেচ্ছাসেবকেরা ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি সামাজিক উদ্যোগে যুক্ত। দলের প্রধান আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অসহায়, নিরন্ন মানুষদের জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। সেই সঙ্গে আমরা চাই ভালো কাজকে উৎসাহ দিতে, পথের এই মানুষেরাও যেন ভালো কাজ করেন।’
–
ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ- এর শুরুর দিকের একজন স্থপতি শিহানুর রহমান। তিনি সময় পেলেই ছুটে আসেন খাবার বিতরণে। তিনি বলেন, “আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করি ‘ডেইলি টেন মেম্বার’- এর মাধ্যমে। ‘ডেইলি টেন মেম্বার’র সদস্য তারাই, যারা রোজ সংগঠনের তহবিলে ১০ টাকা জমা দেন। সংগঠনের ফেসবুক গ্রুপে কয়েক হাজার মানুষ যুক্ত থাকলেও রোজ ১০ টাকা দেন, এমন সদস্য আছেন ২৬৫ জন, যাদের সহায়তায় এই হোটেলটি পরিচালিত হয়।” জানা গেছে, এহেন মহৎ উদ্যোগের সূচনা আরো আগে। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণকে অনুপ্রাণিত করেছিল অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তির গল্প। সে অনুপ্রেরণায় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে তরুণদল, ২০০৯ সালে যার শুরু। আরিফুর রহমান, আশিকুর রহমান, তামিম চৌধুরী, রাজীব সরকার, মাহবুব, সোহেল ও ফয়সালরা সেই সংকল্প এখনো লালন করেন। আরিফুর রহমান বলেন, ‘সে সময় আমরা এক অসহায় বাবার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। মেয়ের চিকিৎসা করাতে মাত্র পাঁচ হাজার টাকার জন্য তিনি পথে পথে ঘুরছিলেন।’
২০১২ সালে সাংগঠনিক রূপ দিতে ফেসবুকে তারা শুরু করেন ‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের প্ল্যাটফর্ম। গ্রুপে যুক্ত হন শাহিনুর রহমান, শাওন রহমান, মনিরুজ্জামানের মতো স্বেচ্ছাসেবকেরা। তাঁরাই এগিয়ে নিচ্ছেন কার্যক্রম। ভালো কাজের হোটেল পরিচালনা ছাড়াও তারা বন্যার্তদের পাশে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাওয়া, অসহায়দের জন্য চিকিৎসাসেবা, শীতার্তদের শীতবস্ত্র বিতরণসহ নানা সামাজিক কাজে নিজেদের নিবেদন করে চলেছেন। তাঁরা বিশ্বাস করে- মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য । তাঁরা লালন করে- সবার সুখে হাসবো আমি কাঁদবো সবার দুঃখে, নিজের খাবার বিলিয়ে দেবো অনাহারির মুখে ।