শনিবার ● ২ মে ২০২০
প্রথম পাতা » উপকুল » টেকনাফের পোকা পঙ্গপাল নয় ঘাসফড়িং
টেকনাফের পোকা পঙ্গপাল নয় ঘাসফড়িং
দ্বীপ নিউজ ডেস্ক।।
কক্সবাজারের টেকনাফে ঘাসফড়িং সদৃশ্য ঝাকে ঝাকে উড়ে আসা পোকা পঙ্গপাল নয় এটি এক প্রকার ঘাসফড়িং। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ইতোমধ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকাগুলো দমন করা হয়েছে। শনিবার কৃষি বিভাগ থেকে আসা উচ্চপর্যায়ের গবেষক প্রতিনিধি দল এসব তথ্য জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শনিবার সকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদদের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি দল টেকনাফে পৌছে। খামারবাড়ী প্রকল্পের উপ-পরিচালক মো. রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নির্মল কুমার দত্ত, বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্রগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. নাছির উদ্দিনসহ গবেষক দল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে গবেষক দল ঘাসফড়িংসদৃশ এই পোকা শনাক্তকরণসহ আক্রমণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংসে এই টিম বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে। কীটনাশক স্প্রে করায় গাছে থাকা পোকাগুলো মারা যাওয়ায় পরিদর্শন টিম আজ সেখানে কোনো জীবিত পোকার খোজ পাননি।
গবেষক দল জানিয়েছেন, ইংরেজিতে (aularches miliaris) এটি বিভিন্ন বনজঙ্গলে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু ফসলের ক্ষতিকর পোকা। এটি তেমন ক্ষতি করে না এইনিয়ে আতঙ্ক হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটা অতি আগে থেকে বাংলাদেশে রেকর্ডে ছিলো পোকা। এটি আমরা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জেনেছি এটা আগে থেকেই পরিচিত একটি পোকা।
স্থানীয় একজন কৃষক আমাদেরকে বলছেন, এটা বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত? কি কারণে এটা বর্মা বর্মাচান্ডালী নামে পরিচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা যেহেতু বার্মা থেকে এসেছে সেই জন্য এই নাম বলা হয়। আসলে আমাদেরও ধারণা এটি বার্মা থেকে আসতে পারে। এটি শুধু বাংলাদেশের রেকর্ডের না ভারত, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি দেশে উপস্থিতি আছে। সব দেশে ক্ষতিকারক পোকা হিসেবে চিহ্নিত আছে। কিন্তু আবার এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি একটি ঘাসফড়িং পোকা।
ঢাকা খামারবাড়ি উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, উপ-পরিচালক, আই পিএম, মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এই পোকাটা নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং দুশ্চিন্তা আমাদের কৃষি ডিপারমেন্টসহ সারা বাংলাদেশে সবার মাঝে এটা নজরে আচ্ছে। ইতিমধ্যে আমরা কৃষি প্রতিষ্ঠান ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের আলোচনা থেকে বুঝলাম আসলে এটা পঙ্গপাল না এটা ঘাসফড়িং এর প্রজাতি। এটা একটা অপদান পোকা। যেহেতু এখানে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার এবং স্থানীয় কৃষি অফিস এটা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করছেন। তারা সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে ব্যবহার করে এটি দমন করতে পেরেছে। বেশ কয়েকবার স্প্রে করার পর এখানে জীবন্ত একটি পোকা ও দেখা যায়নি। সর্বোপরি এখানে আশে পাশেও এই পোকার আক্রমণের কোনকিছু দেখা যায় নাই। এখানে কয়েকটা ব্লক আছে তাদের নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যেকটি ব্লকে যেন মনিটরিং করে দেখা হয়। কোন গাছে, সবজি বা ধান খেতে এই পোকা পাওয়া যায় কিনা। যদি এই পোকা পাওয়া যায়, তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিবে। যেহেতু দমন ব্যবস্থা খুব সহজ, সাইফার মেট্রিন জাতীয় বালাইনাশক স্প্রে করলে এটা দমন হয়ে যায়। চিন্তার কোন কারণ নেই,যদি বেশি সংখ্যক পাকা দেখা যায়। তখনই আমরা এই সাইফার মেট্রিন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করলে দমন করা সম্ভব। এটি পঙ্গপাল নয়, এটি ঘাসফড়িং। এটি নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। এরপরও পোকার নমুনা সংগ্রহ ঢাকা গবেষণাগারে নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা ও মনিটরিং রেখেছি যাতে এটা ব্যাপক ভাবে অন্য কোথাও আর্বিভাব না হয়।
উল্লেখ্য, টেকনাফের লম্বরী গ্রামের একটি বাড়ির আম গাছসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের শাখা-প্রশাখায় সম্প্রতি দেখা মিলে এক ধরনের এ পোকা। পোকাগুলো গাছের পাতা সম্পূর্ণ রূপে খেয়ে ফেলছে। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এলে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। খবর পেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কক্সবাজারের উপ-পরিচালক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকাগুলো দমন করে।
ঘাসফড়িং সদৃশ এসব পোকা আবারও দেখা দিলে এলাকায় পঙ্গপাল আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে জেলা ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে পোকার নমুনা সংগ্রহ করে নমুনা পাঠায় গবেষানাগারে। এসময় কীটনাশক স্প্রে করার পর গাছে থাকা পোকাগুলো মারা যায়। এর পর পোকার দেখা মেলেনি। পঙ্গপাল আতংক ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়।